মার্কিন নির্বাচনে ট্রাম্প-ফ্যাসিবাদ পরাজিত হলেও বিশ্ব-জনগণের সাম্রাজ্যবাদ উচ্ছেদের সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে
            
            
            
            আন্দোলন প্রতিবেদন
রবিবার, ২৯ নভেম্বর ২০২০ | অনলাইন সংস্করণ
বিশ্ব-পুঁজিবাদের প্রধান মোড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, যার সমাপ্তি এখনো হয়নি। সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থাই যে ফ্যাসিবাদের জন্ম দেয়, তার প্রমাণ খোদ মার্কিন দেশে ট্রাম্পের শাসনামলে ভয়াবহ রূপেই প্রকাশ ঘটেছে। পরাজিত হয়েও আমেরিকার ফ্যাসিবাদী ট্রাম্পপন্থী শাসকরা এখনো ক্ষমতা ধরে রাখাতে চাইছে। কিন্তু মার্কিন বুর্জোয়া শাসকশ্রেণি এবং তাদের রাষ্ট্রযন্ত্র নিজ দেশে যতটা সম্ভব বুর্জোয়া গণতন্ত্রকেই তাদের সংকট মোচনের জন্য বেশি উপযোগী মনে করছে। সম্ভবত এ কারণে বাইডেনকে তারা প্রেসিডেন্ট হিসেবে গ্রহণ করে নিচ্ছে।
আমেরিকার শাসকশ্রেণি ও রাষ্ট্রযন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ফ্যাসিবাদের পথকেই বিকশিত করতে চায়। সে সুযোগ তারা পাচ্ছে শাসকশ্রেণির বুর্জোয়া-গণতন্ত্রপন্থীদের থেকেই। উভয় গোষ্ঠীই পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থারই প্রতিনিধি। বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদ বিশেষত মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সংকট উত্তরণের জন্য তাদের একটি বড় অংশ ফ্যাসিবাদকেই আশ্রয় করতে চাইছে।
কিন্তু ফ্যাসিবাদ ও বুর্জোয়া গণতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য আছে। কারণ, ফ্যাসিবাদ জনগণ ও বিপ্লবের বিরুদ্ধে বেশি আগ্রাসী। ট্রাম্পের নেতৃত্বে ফ্যাসিবাদী উগ্র শেতাঙ্গ বর্ণবাদ আফ্রিকান-আমেরিকান, ল্যাটিনো, মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীদের বিরুদ্ধে মাত্রাতিরিক্ত আক্রমণাত্মক ভুমিকা নিয়েছে। তারা বড় বুর্জোয়াদের উপর ট্যাক্স কমিয়ে সাধারণ জনগণের জন্য স্বাস্থ্যসেবা বা এজাতীয় বহু কল্যাণমূলক কর্মসূচি বন্ধ করে দিয়েছে। তারা জলবায়ু সমস্যা তথা উষ্ণতার বিরুদ্ধে লড়াই থেকে সরে এসেছে। তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে সরে এসেছে। ধর্মপ্রশ্নে তারা এক মৌলবাদী ফ্যাসিস্ট নীতি এবং নারী-প্রশ্নে খোলামেলা পুরুষতান্ত্রিক ও ধর্মবাদী ফ্যাসিস্ট নীতি প্রচার করছে। তারা বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ-উন্মাদনা এমন পর্যায়ে নিয়েছে যা যেকোনো সময় যুদ্ধ বাধার ঝুঁকিতে বিশ্বকে ঠেলে দিতে পারে।
ট্রাম্প বলেছে করোনা কোনো সমস্যা নয় এবং বিভিন্ন উদ্ভট বক্তব্য দিয়ে লক্ষ লক্ষ জনগণকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। এমনকি বুর্জোয়া গণতন্ত্রের প্রধান যে বৈশিষ্ট্য- নিরপেক্ষ নির্বাচন ও শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর- সেটাও তারা হুমকিতে ফেলেছে।
আপাতত ফ্যাসিবাদীরা যে পরাজিত হয়েছে তার গুরুত্বর্পূ কারণ হলো জনগণের ফ্যাসিবিরোধী সংগ্রাম ও প্রতিরোধ। নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের বর্ণবাদী নিপীড়নের বিরুদ্ধে আমেরিকা জুড়ে যে গণ-উত্থান ঘটেছিল সেটা ট্রাম্পের পরাজয়ে ভুমিকা রেখেছে। নির্বাচন কালজুড়ে ট্রাম্প যেসব ফ্যাসিবাদী উক্তি ও কার্যকলাপ করে চলেছে তার বিরুদ্ধে আমেরিকার সর্বস্তরের জনগণের বিপুল গণপ্রতিরোধ গড়ে উঠেছে। এসবের কারণেই অল্প ব্যবধানে ট্রাম্প পরাজিত হয়েছে।
কিন্তু ফলাফলে দেখা গেছে, ট্রাম্পের মত এক মিথ্যুক, দাম্ভিক, ফ্যাসিস্ট লোকও আমেরিকায় কতটা জনসমর্থন পেয়েছে। সে প্রায় জিতেই গিয়েছিল। কারণ, সে মার্কিন বুর্জোয়াদের ফ্যাসিবাদী অংশের এক উগ্র প্রতিনিধি। যে কিনা আমেরিকাই বিশ্বে প্রথম নীতি রাখতে চেয়ে চীনা সাম্রাজ্যবাদের কাছে না হারার জন্য ফ্যাসিবাদের পথ দেখিয়েছে।
ট্রাম্পের পরাজয় নিশ্চিত হলে তা আমেরিকা সহ বিশ্ব জনগণের জন্য একটি স্বস্থির বিষয় হলেও বিশ্ব জনগণের দুর্দশা লাঘব হবার নয়। কারণ, বাইডেন-কমলা জুটি বিশ্ব-জনগণের প্রধানতম শত্রু মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের প্রতিনিধিই থাকবে। তাই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বিশ্ব-জনগণের লড়াই এক বিন্দু শিথিল করা যাবে না।
বিশেষত আমাদের দেশের ক্ষেত্রে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও ভারতের ভূমিকার তেমন কোন পরিবর্তন হবে না। কারণ, বিশ্ব প্রভুত্বের প্রতিযোগিতায় চীনের বিরুদ্ধে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ভারতের সাথে যে সখ্যতা গড়ে তুলেছে তা চলবেই। ভারতের দালাল হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকার এই গোষ্ঠীরই সেবা করবে। যতই সে চীনের সাথে ব্যালেন্স করে চলার চেষ্ট করুক না কেন, ভারত-মার্কিন শক্তি চীনের সাথে বেশি মাখামাখি সহ্য করবে না।
তাই, ফ্যাসিবাদ-বিরোধী কৌশলগত অবস্থানের সাথে সাথে গুরুত্বপূর্ণ হলো সাম্রাজ্যবাদবিরোধী রণনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিটিকে শাণিত রাখা। তবেই বিশ্ব-বিপ্লব ও দেশীয় বিপ্লবের জন্য ইতিবাচক ভুমিকা রাখা সম্ভব হবে।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
মার্কিন নির্বাচনে ট্রাম্প-ফ্যাসিবাদ পরাজিত হলেও বিশ্ব-জনগণের সাম্রাজ্যবাদ উচ্ছেদের সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে
বিশ্ব-পুঁজিবাদের প্রধান মোড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, যার সমাপ্তি এখনো হয়নি। সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থাই যে ফ্যাসিবাদের জন্ম দেয়, তার প্রমাণ খোদ মার্কিন দেশে ট্রাম্পের শাসনামলে ভয়াবহ রূপেই প্রকাশ ঘটেছে। পরাজিত হয়েও আমেরিকার ফ্যাসিবাদী ট্রাম্পপন্থী শাসকরা এখনো ক্ষমতা ধরে রাখাতে চাইছে। কিন্তু মার্কিন বুর্জোয়া শাসকশ্রেণি এবং তাদের রাষ্ট্রযন্ত্র নিজ দেশে যতটা সম্ভব বুর্জোয়া গণতন্ত্রকেই তাদের সংকট মোচনের জন্য বেশি উপযোগী মনে করছে। সম্ভবত এ কারণে বাইডেনকে তারা প্রেসিডেন্ট হিসেবে গ্রহণ করে নিচ্ছে।
আমেরিকার শাসকশ্রেণি ও রাষ্ট্রযন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ফ্যাসিবাদের পথকেই বিকশিত করতে চায়। সে সুযোগ তারা পাচ্ছে শাসকশ্রেণির বুর্জোয়া-গণতন্ত্রপন্থীদের থেকেই। উভয় গোষ্ঠীই পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থারই প্রতিনিধি। বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদ বিশেষত মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সংকট উত্তরণের জন্য তাদের একটি বড় অংশ ফ্যাসিবাদকেই আশ্রয় করতে চাইছে।
কিন্তু ফ্যাসিবাদ ও বুর্জোয়া গণতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য আছে। কারণ, ফ্যাসিবাদ জনগণ ও বিপ্লবের বিরুদ্ধে বেশি আগ্রাসী। ট্রাম্পের নেতৃত্বে ফ্যাসিবাদী উগ্র শেতাঙ্গ বর্ণবাদ আফ্রিকান-আমেরিকান, ল্যাটিনো, মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীদের বিরুদ্ধে মাত্রাতিরিক্ত আক্রমণাত্মক ভুমিকা নিয়েছে। তারা বড় বুর্জোয়াদের উপর ট্যাক্স কমিয়ে সাধারণ জনগণের জন্য স্বাস্থ্যসেবা বা এজাতীয় বহু কল্যাণমূলক কর্মসূচি বন্ধ করে দিয়েছে। তারা জলবায়ু সমস্যা তথা উষ্ণতার বিরুদ্ধে লড়াই থেকে সরে এসেছে। তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে সরে এসেছে। ধর্মপ্রশ্নে তারা এক মৌলবাদী ফ্যাসিস্ট নীতি এবং নারী-প্রশ্নে খোলামেলা পুরুষতান্ত্রিক ও ধর্মবাদী ফ্যাসিস্ট নীতি প্রচার করছে। তারা বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ-উন্মাদনা এমন পর্যায়ে নিয়েছে যা যেকোনো সময় যুদ্ধ বাধার ঝুঁকিতে বিশ্বকে ঠেলে দিতে পারে।
ট্রাম্প বলেছে করোনা কোনো সমস্যা নয় এবং বিভিন্ন উদ্ভট বক্তব্য দিয়ে লক্ষ লক্ষ জনগণকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। এমনকি বুর্জোয়া গণতন্ত্রের প্রধান যে বৈশিষ্ট্য- নিরপেক্ষ নির্বাচন ও শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর- সেটাও তারা হুমকিতে ফেলেছে।
আপাতত ফ্যাসিবাদীরা যে পরাজিত হয়েছে তার গুরুত্বর্পূ কারণ হলো জনগণের ফ্যাসিবিরোধী সংগ্রাম ও প্রতিরোধ। নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের বর্ণবাদী নিপীড়নের বিরুদ্ধে আমেরিকা জুড়ে যে গণ-উত্থান ঘটেছিল সেটা ট্রাম্পের পরাজয়ে ভুমিকা রেখেছে। নির্বাচন কালজুড়ে ট্রাম্প যেসব ফ্যাসিবাদী উক্তি ও কার্যকলাপ করে চলেছে তার বিরুদ্ধে আমেরিকার সর্বস্তরের জনগণের বিপুল গণপ্রতিরোধ গড়ে উঠেছে। এসবের কারণেই অল্প ব্যবধানে ট্রাম্প পরাজিত হয়েছে।
কিন্তু ফলাফলে দেখা গেছে, ট্রাম্পের মত এক মিথ্যুক, দাম্ভিক, ফ্যাসিস্ট লোকও আমেরিকায় কতটা জনসমর্থন পেয়েছে। সে প্রায় জিতেই গিয়েছিল। কারণ, সে মার্কিন বুর্জোয়াদের ফ্যাসিবাদী অংশের এক উগ্র প্রতিনিধি। যে কিনা আমেরিকাই বিশ্বে প্রথম নীতি রাখতে চেয়ে চীনা সাম্রাজ্যবাদের কাছে না হারার জন্য ফ্যাসিবাদের পথ দেখিয়েছে।
ট্রাম্পের পরাজয় নিশ্চিত হলে তা আমেরিকা সহ বিশ্ব জনগণের জন্য একটি স্বস্থির বিষয় হলেও বিশ্ব জনগণের দুর্দশা লাঘব হবার নয়। কারণ, বাইডেন-কমলা জুটি বিশ্ব-জনগণের প্রধানতম শত্রু মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের প্রতিনিধিই থাকবে। তাই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বিশ্ব-জনগণের লড়াই এক বিন্দু শিথিল করা যাবে না।
বিশেষত আমাদের দেশের ক্ষেত্রে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও ভারতের ভূমিকার তেমন কোন পরিবর্তন হবে না। কারণ, বিশ্ব প্রভুত্বের প্রতিযোগিতায় চীনের বিরুদ্ধে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ভারতের সাথে যে সখ্যতা গড়ে তুলেছে তা চলবেই। ভারতের দালাল হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকার এই গোষ্ঠীরই সেবা করবে। যতই সে চীনের সাথে ব্যালেন্স করে চলার চেষ্ট করুক না কেন, ভারত-মার্কিন শক্তি চীনের সাথে বেশি মাখামাখি সহ্য করবে না।
তাই, ফ্যাসিবাদ-বিরোধী কৌশলগত অবস্থানের সাথে সাথে গুরুত্বপূর্ণ হলো সাম্রাজ্যবাদবিরোধী রণনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিটিকে শাণিত রাখা। তবেই বিশ্ব-বিপ্লব ও দেশীয় বিপ্লবের জন্য ইতিবাচক ভুমিকা রাখা সম্ভব হবে।
আরও খবর
- শনি
 - রোব
 - সোম
 - মঙ্গল
 - বুধ
 - বৃহ
 - শুক্র